কাজী সাঈদ ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একসময় বরিশাল ছিলো বাংলার ভেনিস। বরিশালকে বলা হতো শশ্য ভান্ডার। বরিশালের সেই হারানো গৌরব ‘শশ্য ভান্ডার’ ফিরিয়ে আনা হবে। এজন্য গবেষণা করা হচ্ছে। গতকাল সোমবার বিকেলে গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সরকার স্বাস্থ্যখাতে নতুন নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করে সেগুলো বাস্তবায়ন করছে। দেশের বিভিন্নস্থানে চাহিদা মোতাবেক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার সরকারী হাসপাতালগুলোর শয্যা সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। আমরা প্রতিটি উপজেলায় ১০০ শয্যার হাসপাতাল করছি। বিভিন্ন জেলার হাসপাতালগুলো ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। এমন কোনো হাসপাতাল নেই যেখানে অপারেশন থিয়েটার নেই। তার পরেও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার, সার্জন কিংবা নার্সরা থাকেন না। এমনটা হতে পারেনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা শুধু নৌপথ, স্থলপথ, রেলপথ বা আকাশ পথের উন্নয়ন করিনি, আমরা তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন করেছি। দক্ষিণাঞ্চলবাসীর জন্য পদ্মা সেতুর পাশাপাশি বরিশাল বিভাগের পায়রা সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত রেল যোগাযোগের ব্যবস্থা করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত দেশ। বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। জাতির পিতার স্বপ্ন ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত দেশ গড়াই হচ্ছে আমাদের মূল লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের আবাসন সংকট সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গতকাল সোমবার বিকেলে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবামেক) হাসপাতালের ৫০বছর পূর্তি (সুবর্ণ জয়ন্তী) উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধণকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সের সময় মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসের অনুষ্ঠানস্থলে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস, বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজ, বরিশালের নবনির্বাচিত সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, বরিশাল জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মহাসচিব ডাঃ মোঃ ইহতেশামুল হক চৌধুরী, শেবামেকের অধ্যক্ষ ডাঃ ভাস্কর সাহা সহ বিভিন্ন কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসের অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের সময়কার বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের ব্যাপক উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন। এ সময় ভোলার গ্যাস পাইপ লাইনের মাধ্যমে বরিশালের আনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উন্নত আবাসন ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রকল্প পাঠাতে বলেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী আলাদাভাবে বরিশালে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় নির্মানের কথাও উল্লেখ করেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসের অনুষ্ঠাস্থল থেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান ও শেবামেকের অধ্যক্ষ ডাঃ ভাস্কর সাহা।
অপরদিকে তিন দিনব্যাপী সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের দ্বিতীয় দিনে গতকাল সোমবার সকালে আনন্দ র্যালী অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১০টায় অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে থেকে র্যালীটি বের হয়ে বান্দরোড, চাঁদমারি হয়ে পুনরায় ক্যাম্পাসে গিয়ে শেষ হয়। র্যালীতে প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। র্যালীর অগ্রভাগে হাতি ও মধ্যখানে ঘোড়ার গাড়ি ছিলো মূল আকর্ষণ। র্যালী শেষে কলেজ ক্যাম্পাসে নবনির্মিত সুবর্ণ জয়ন্তী স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধণ করেন শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এএফএম আমিনুল ইসলাম।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কলেজ অধ্যক্ষ ডাঃ ভাস্কর সাহা, হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ বাকির হোসেন, শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের সাবেক ছাত্র সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ টিআইএম আব্দুল্লাহ আল ফারুক, বিএমএ বরিশালের সভাপতি ডাঃ ইসতিয়াক হোসেন প্রমুখ। পরে ডাঃ এএফএম আমিনুল ইসলামকে কলেজের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপনের সাংগঠনিক সভাপতি ও ছাত্র সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ টিআইএম আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ১৯৬৮ সালের ২০ নভেম্বর দক্ষিণবঙ্গের সর্ববৃহৎ চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপতালের যাত্রা শুরু হয়। আর সে হিসেবে চলতি বছরের ২০ নভেম্বর ৫০ বছর পূর্তি হবে। কিন্তু আগামি নভেম্বর মাস ভোটের মাস হওয়ায় আগে ভাগেই অর্থাৎ ৭ অক্টোবর থেকে তিন দিনব্যাপী ব্যাপক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
Leave a Reply